বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগরের অনুবাদ মূলক এবং মৌলিক গ্রন্থ গুলির নাম।

      বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর

   বীরসিংহের সিংহ শিশু বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলা গদ্যের জনক। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বাংলা গদ্যের প্রথম যথার্থ শিল্পী তিনি। নিম্নে তার সাহিত্যে অবদানের দিকটি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।             বিদ্যাসাগর সাহিত্য রচনার উদ্দেশ্য ছিল নিছক জনকল্যাণ সাহিত্য রচনা নয়। ১৮৪৭-১৮৬৫ যে পর্বটিকে তত্ত্ববোধিনী পর্ব বলা হয় ,তা এক অর্থে বিদ্যাসাগর পর্ব । তিনি যে যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে সময়টি ছিল  'Age of reason'এবং  'Rights of man'এর যুগ অর্থাৎ যুক্তি দ্বারা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার উন্মেষ কাল। বিদ্যাসাগর  ছিলেন এই কালের সার্থক পুরোহিত।তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত বংশের ছেলে, তাই সংস্কৃত কলেজে যোগদান করেছিলেন অল্প বয়সে সংস্কৃত শাস্ত্র অধ্যয়ন করে অধ্যাপকদের দ্বারা বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। তার রচনাবলী কে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। (১)অনুবাদ মূলক। (২)মৌলিক রচনা সমূহ। তার অনুবাদ মূলক রচনা গুলির মধ্যে আছে হিন্দি 'বৈতাল পচ্চীসী' এর অনুবাদ 'বেতাল পঞ্চবিংশতি', কালিদাসের 'অভিজ্ঞান শকুন্তলম' নাটকের অনুবাদ 'শকুন্তলা'। ভবভূতির
উত্তর চরিত এবং বাল্মীকি রামায়ণের উত্তর কান্ডের আখ্যানের অনুসরনে 'সীতার বনবাস'।শেক্সপিয়রের 'Comedy of Errors'এর অনুবাদে ভ্রান্তিবিলাস, এছাড়াও মার্শম্যানের 'History of bengal'এর কয়েকটি অধ্যায় অবলম্বনে 'বাংলার ইতিহাস' ইত্যাদি রচনা করেন।
তার মৌলিক রচনা গুলি হলো 'প্রভাবতী সম্ভাষণ', 'বিদ্যাসাগরচরিত' ,'সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রস্তাব'। এছাড়াও তার সমাজ সংস্কার মূলক রচনা মধ্যে আছে ‘বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’, 'বহুবিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিষয়ক প্রস্তাব'। তাঁর লঘু রচনার মধ্যে আছে 'অতি অল্প হইল', 'আবার অতি অল্প হইল','ব্রজবিলাস' ও 'রত্নপরীক্ষা' এগুলি তার কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য ছদ্মনামে রচিত। তাঁর কয়েকটি শিক্ষামূলক রচনার মধ্যে আছে 'বর্ণপরিচয়' ও 'সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা'।
বিদ্যাসাগর সংস্কারান্ধ ব্রাহ্মণ পন্ডিত ছিলেন না ,তাই সংস্কৃতের অশেষ জ্ঞান থাকলেও ইংরেজি গদ্যের প্রসাদগুণ,
প্রাঞ্জলতা ,পরিমাণগত অস্বাভাবিকতা বিদ্যাসাগরকে মুগ্ধ করেছিল। সংস্কৃত ও ইংরেজি উভয় ধারার সম্মেলনে বাংলা গদ্যের সাধু ভাষা তে তিনি এক নিজস্ব স্টাইল আনলেন। 'বেতাল পঞ্চবিংশতি' তে বাংলা গদ্যের এই আদি সাধু ভাষার প্রথম সাহিত্যিক প্রকাশ । এবং 'শকুন্তলা'য় শ্রেষ্ঠ প্রকাশ। শকুন্তলার ভাষা যেমন লালিত্য পূর্ণ তেমনি শিল্পশ্রী মন্ডিত। 'সীতার বনবাস' এর মধ্যবর্তী কালেও তিনি মহাভারতের উপক্রমণিকা অনুবাদ করেন। সেখানেও তিনি গুরুগম্ভীর ভাষা ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তার গদ্য কতখানি সরল আধুনিক হয়ে উঠেছিল তা 'অতি অল্প হইল', 'আবার অতি অল্প হইল', 'ব্রজবিলাস' বিদ্যাসাগরের এই গ্রন্থ গুলি দেখলেই বোঝা যাবে।একটি মানুষের রচনায় বাংলা সাধু ভাষার আদিরূপ থেকে আধুনিক রূপ দেখতে পায়। বিরতি ও যতি চিহ্ন দ্বারা শাসিত ও সংশোধিত করে বাংলা গদ্য বোধের ভাষাকে রসের পর্যায়ে উন্নীত করেছিলেন। কমা সেমিকোলন এর ব্যবহার যথার্থ অধিকারের ঢঙে প্রথম করতে পেরেছিলেন বিদ্যাসাগর। বাংলা গদ্যের প্রথম যথার্থ শিল্পী এই জন্যই যে,বাংলা সাধু গদ্যের কাঠামো কি রকম হওয়া উচিত এই নিয়ে তিনি অনেক পরীক্ষা করেছিলেন । এবং গদ্যের সম্ভাবনা নিয়েও পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি বাংলা গদ্য কে দিয়েছেন স্বাতন্ত্র ও অভিজাত্য।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগরের অনুবাদ মূলক এবং মৌলিক গ্রন্থ গুলির নাম।

      বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর    বীরসিংহের সিংহ শিশু বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলা গদ্যের জনক। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বাংলা গদ্যের প্রথম যথার্থ ...